কেরানীগঞ্জে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে ঝিলমিল আবাসিক এলাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। এই প্রকল্পে রাজউক মোট ১,৬৩৫টি প্লটে প্রায় ১২ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট তৈরির পরিকল্পনা করে। প্রস্তাবিত মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য একটি স্টেশন এখানে নির্মিত হবে। এছাড়াও ভবিষ্যতে ঢাকাকে ঘিরে প্রস্তাবিত রিং-রোড প্রকল্পের আওতায় একে রাখা হয়েছে।কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় প্রায় ১৪ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ এ মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে যাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। নির্মাণকাজ শেষ হলে এটি হবে দেশের অন্যতম প্রধান বহুতল ভবনবিশিষ্ট আবাসন।প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিএনজির সঙ্গে চুক্তি করেছিল রাজউক। ২০২৩ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে এই প্রকল্প। এর পাশ দিয়ে গেছে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক।
মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) ২০১৮-১৯ অর্থবছরের নবম অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়।এছাড়া গত ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১১৭তম সভায় ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের পশ্চিমদি মৌজায় প্রায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস এমনভাবে কর যাতে কেউ ঢাকা এলে এই ক্যাম্পাস একবার হলেও ঘুরে যেতে বাধ্য হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যতো জমি লাগবে, যতো টাকা লাগবে, তার জোগান দেওয়া হবে। ’ এ প্রকল্পের মধ্যে অত্যাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১ অক্টোবর ২০১৮ থেকে এ প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটির অধীনে ভূমি অধিগ্রহণ, নিচু জমি ভরাট করা, পুকুর খনন, গাছ লাগানো, কতটা হল, কতটা বিল্ডিং, খেলার মাঠ, টিএসসি ও ডিজাইন।
রাজধানীর উপকণ্ঠের কেরানীগঞ্জ উপজেলায় আধুনিক মডেল নগরী গড়ে ওঠার পথে।রাজধানী ঢাকার পাশে নতুন এক ঝলমলে শহর গড়ে ওঠার পদধ্বনি। এটি হবে রাজধানীর উত্তরাঞ্চলের পর দক্ষিণাঞ্চলের (বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে) অভাবনীয় উন্নয়ন। কেরানীগঞ্জ ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে একটি সম্ভাবনাময় আধুনিক উপজেলা।একসময়ের পতিত জমিগুলো এখন মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়েছে। জমির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এ এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক মানও বেড়েছে। অভাব ঘুচতে শুরু করেছে অনেকের। স্থানীয় বাসিন্দারা স্বপ্ন দেখছেন সমৃদ্ধ জীবনযাপনের। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়ে গেলে কেরানীগঞ্জ আধুনিক নগরীর খেতাবও অর্জন করবে।
ঢাকার আরামবাগে নটরডেম কলেজের সামনে থেকে কেরানীগঞ্জের কদমতলী সার্কেল পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।উড়ালসড়কটি এখান থেকে গুলিস্তান, পল্টন হয়ে শান্তিনগরে গিয়ে শেষ হবে। এলাকার ভেতরে চলাচলের জন্য ১২ দশমিক ১৯ মিটার থেকে ৩৬ দশমিক ৫৮ মিটার প্রস্থের রাস্তা তৈরি করা হবে। এলাকার চারপাশে মোট ছয়টি প্রবেশপথ থাকবে। মূল প্রবেশপথের সামনে থাকবে ৬০ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের রাস্তা। এটি ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।ফকিরাপুল ইন্টারসেকশনের পরে ফ্লাইওভারটি আরামবাগ (টয়েনবী সার্কুলার রোড) থেকে শুরু করে ঢাকা-মাওয়া রোডের ঝিলমিল পর্যন্ত নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এমআরটি-৬ এবং বিআরটি-৩ এর সঙ্গে সঠিক সংযোগ তৈরি হবে ফ্লাইওভারের। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে এখান থেকে ঢাকা শহরের পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগ সহজ হবে।২০১৭ সালে রিভাইস স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (আরএসটিপি) অনুযায়ী, দেশের সর্ববৃহৎ এ ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে।‘শান্তিনগর হতে ঢাকা-মাওয়া রোড (ঝিলমিল) পর্যন্ত ফ্লাইওভার হবে। রাজধানীর কাকরাইল থেকে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল পর্যন্ত আরেকটি ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা করছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। রাজধানীর সড়ক যোগাযোগের মহাপরিকল্পনা কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) বহির্ভূত এ ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটির ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
পদ্মার পাড়েই হবে নতুন বিমানবন্দর, যার নাম হবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’৷ সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে বিমানবন্দরটিতে৷ দ্রুততার সঙ্গে এর সফল বাস্তবায়নে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে৷ নতুন এ বিমানবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে একটি বিমান চলাচলের বড় কেন্দ্র (এয়ারলাইন্স হাব) হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে সরকার৷
চারদিকে ঘন অন্ধকার। ফ্লাডলাইটের উজ্জ্বল আলো সেই অন্ধকার বিদীর্ণ করে আকাশ আলোকিত করছে। তারই মাঝে উসাইন বোল্টের মতো কোনো এক তারকার দৌড় কিংবা শারাপোভার মতো কোনো টেনিস সেনসেশনের নৈপুণ্যে বিমোহিত হবে লাখো মানুষ। পদ্মার পারে এমনই দৃশ্যের সূচনা হতে যাচ্ছে। কল্পনায় নয়, বাস্তবে। পদ্মা নদীর পার ঘেঁষে গড়ে উঠবে অলিম্পিক ভিলেজ। দেশের ক্রীড়াবিদদের মান বাড়াতে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে গড়ে তুলতে অনন্য ভূমিকা পালন করবে এই ভিলেজ।আড়িয়ালখাঁ সেতুর ওপর নির্মাণ করা হবে দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ। থাকবে হেলিপ্যাড। ক্রীড়া ভেন্যুর পাশাপাশি তৈরি করা হবে অনুশীলন ভেন্যুও। ১০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন টেনিস কমপ্লেক্সের পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে অনুশীলনের জন্যও আলাদা কোর্টও থাকবে। সুইমিংপুলের পাশাপাশি ডাইভিং এবং ওয়াটার পলো খেলার ব্যবস্থাও থাকবে। ১০টি বাস্কেটবল মাঠ, তিনটি করে হকি, ক্রিকেট ও ফুটবল স্টেডিয়ামের সঙ্গে দুটি রাগবি মাঠ রয়েছে এই মহাপরিকল্পনায়। জুডো, কারাতে এবং তায়কোয়ান্ডোর জন্য ৩টি ইনডোর স্টেডিয়াম, দুটি জিমন্যাশিয়াম, ভারোত্তোলন ও কাবাডির জন্য দুটি পৃথক মাঠ এবং অ্যাথলেটিক্সের আলাদা ওয়ার্মআপ ট্র্যাক থাকবে।প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মার তীরে অলিম্পিক ভিলেজ হলে তা পর্যটক টানবে বলে মনে করি আমি। খেলা দেখার পর মাঝিদের সঙ্গে পদ্মায় নৌবিহারে বেরিয়ে পড়লেই হল। পাশাপাশি ইলিশ দিয়ে রসনাতৃপ্তির ব্যাপারটা তো আছেই।
পদ্মা তীরে হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম । বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক ও বর্তমান সংসদ সদস্য নাইমুর রহমান দুর্জয়ের জন্ম মানিকগঞ্জে।নদীর কাছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছার অংশ হিসেবেই স্পটটি পরিদর্শন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্জয়। তিনি বলেন, ‘পাটুরিয়া ফেরি ঘাট সংলগ্ন এলাকাটি প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। ফেরি ঘাট ছাড়াও চারপাশে সুন্দর প্রকৃতি বিদ্যমান। যদি এখানে স্টেডিয়াম নির্মিত হয়, এই অঞ্চলে পর্যটন শিল্পও উন্নত হবে। ’ স্বপ্ন থেকে এখন বাস্তবতার জ্বলজ্বলে দৃষ্টান্ত পদ্মা সেতু। যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে পদ্মা পাড়ের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থাও। কিন্তু ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত কারণে তারা এখনও সুবিধা বঞ্চিত। বিষয়টি বিবেচনায় এনে এবার এই অঞ্চলে প্রস্তাব করা হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম নির্মাণের।
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে লৌহজং, মুন্সিগঞ্জের সাথে শরিয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে, ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে এর ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তর বিশিষ্ট ষ্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির (truss bridge) ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে থাকবে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর আববাহিকায় ১৫০মিটার দৈর্ঘ্যর ৪১টি স্পান বসবে, ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় সেতু।প্রকল্পটি তিনটি জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করবে- মুন্সীগঞ্জ (মাওয়া পয়েন্ট/উত্তর পাড়), শরীয়তপুর এবং মাদারীপুর (জঞ্জিরা/দক্ষিণ পাড়)। এটির জন্য প্রয়োজনীয় এবং অধিগ্রহণকৃত মোট জমির পরিমাণ ৯১৮ হেক্টর। পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণকাজ ২০২২ সালে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনাভাইরাস মহামারি ও বন্যায় কাজ বাধাগ্রস্ত না হলে তা ২০২১ সালেই শেষ হতো বলে জানান তিনি। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে । পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকা-মাওয়া পরিনিত হবে অর্থনীতির কেন্দ্র বিন্দুতে ।
যাতায়াতের সময় কয়েক ঘণ্টা কমিয়ে রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগে নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ মার্চ,২০২০ইং রোজ বৃহস্পতিবার তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যান চলাচলের জন্য নবনির্মিত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করবেন। এটিই বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে যেখানে কোন রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই দ্রুত গতিতে গাড়ি চলতে পারবে। পদ্মা নদীর উপর প্রায় ৬.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হলে এই এক্সপ্রেসওয়ের পুরো সুবিধা পাওয়া যাবে বলে কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন। তখন ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে ৪২ মিনিট – এমনটাই বলছে সরকারের সড়ক ও জনপদ বিভাগ। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।
পদ্মা সেতু ঘিরে হংকংয়ের আদলে নগর গড়ার পরিকল্পনার কথাও বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। পদ্মাসেতুর দুই পাড়ে আধুনিক শহর, আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সড়ক ও রেল যোগাযোগসহ অত্যাধুনিক উন্নয়ন করার পরিকল্পনা সামনে রেখেই এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতুর কাজ।সূত্র জানায়, পদ্মাসেতু নির্মাণের পর নদী তীরে সিঙ্গাপুর বা হংকংয়ের আদলে একটি শহর গড়ে তোলা হবে। আন্তর্জাতিক মানের সম্মেলন কেন্দ্র ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ এবং বাণিজ্য মেলার আয়োজনসহ ঢাকার কাছের ওই এলাকাকে ‘আধুনিক’ নগরে রূপ দেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে সচিব কমিটি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘সেখানে আমরা একটা নতুন শহর গড়ে তুলতে পারি। সেখানে একটা ভালো কনভেনশন সেন্টার করা হবে।’